Friday, November 15, 2019

সারাজীবন সুস্থ থাকার মহাকৌশল!।সঠিক নিয়মে পানি পান


সুস্থ ও সবলভাবে বেঁচে থাকার জন্য পানি পানের কোনো বিকল্প নেই। পানি কিডনির মাধ্যমে আপনার শরীরের সব ক্ষতিকারক উপাদান দূর করে দেয়।

জীবনের জন্য অক্সিজেন-এর পরেই পানির স্থান। পৃথিবীর মতো প্রত্যেকটি মানুষেরও শরীরের ৭২% হলো পানি। এমনকি হাড়ের এক-চতুর্থাংশ, পেশির তিন-চতুর্থাংশ ও মস্তিষ্কের ৮৫% পানি দিয়ে গঠিত। আমাদের রক্ত ও ফুসফুসের ৮০% পানির তৈরি।আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলো খাদ্য হিসেবে যে অক্সিজেন গ্রহণ করে, তার পুরোটাই আহরিত হয় পানকৃত পানি থেকে। একজন মানুষের প্রতিদিন পানির চাহিদা কতটুকু তা নির্ভর করে আবহাওয়া, তার কাজকর্মের পরিমাণ, শরীরের অবস্থা ইত্যাদির ওপর। পানি পান নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশে রয়েছে থার্স্ট সেন্টার বা পিপাসাকেন্দ্র। এই কেন্দ্র জানিয়ে দেয় যে কখন পানি পান করা দরকার। আমাদের মতো উষ্ণ আবহাওয়ার দেশে মোটামুটি পরিশ্রমের কাজ করলে একজন মানুষের সাধারণত দিনে দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করলেই চলে। তবে এটি নির্ভর করে তার দেহ থেকে স্বাভাবিক পানি নির্গত হওয়ার পরিমাণের ওপর।
দৈনিক কত গ্লাস পানি করবেন: ২-৩ লিটার, ওজন ১০০ কেজির উপরে হলে ৩-৪ লিটার। আমরা সবাই জানি- পানির অপর নাম জীবন; আবার জীবনের অপর নামও পানি। পুষ্টিবিদেরা এর সঙ্গে ‘বিশুদ্ধ’ শব্দটি যোগ করে বলেন- বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন। কথা ঠিক। পানি যদি বিশুদ্ধ না হয়, সেটি শরীরের উপকারের চাইতে ক্ষতিই বেশি করে। দুষিত পানি পান ও ব্যবহার করার কারণে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হন; এমনকি মৃত্যুবরণ করেন!


পানি পানের সঠিক নিয়ম


  • পানি খাওয়ার মৌলিক বিষয় হচ্ছে পানি অবশ্যই খালি পেটে খেতে হবে।
  • খাওয়া শুরুর ৩০-৪৫ মিনিট আগে পানি খেতে হতে হবে। এটাই আপনাকে হজমে সাহায্য করবে।
  • ১-২ ঘণ্টা পর পর পানি পান করুন। আসুন এই বিষয়ে মৌলিক বিষয় জেনে নেই।
    খাবার পাকস্থলী পৌছনোর পরে পাচক রস বের হয় খাবার হজম করার জন্য। এখন আপনি যদি পান করেন তাহলে পাচক রসের ঘণত্ব কমে যাবে (HCl+Water). যত বেশি পানি পান করবেন তত ঘণত্ব কমে যাবে । এতে আপনার হজমক্রিয়া সম্পন্ন হতে লম্বা সময় নিবে। পেটে গ্যস হবার এটাই মূল কারন।
  •  ঘুম থেকে উঠেই পানি পান করলে শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যায়। ফলে রোগভোগের আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
  •  গবেষণায় দেখা গেছে সকাল সকাল পানি পানের অভ্যাস করলে কিডনি এবং ইনটেস্টাইনের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। প্রসাবের বেগ আসলেও আমরা প্রসাব করি না। আর এটাই কিডনি নষ্ট হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।
  •  সকালে ঘুম থেকে উঠেই শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া চালু করার জন্য বাসি মুখে কমপক্ষে এক লিটার (তিন-চার গ্লাস) পানি পান করতে হবে। মুখ-গহ্বরে জমে থাকা ক্ষার (alkalinity) পানির সঙ্গে গুলিয়ে পাকস্থলিতে চলে যাবে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অতিশয় দরকারি।
  •  সারাদিনে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করুন। যত বেশি পরিমাণে পানি পান করতে পারবেন, কিডনিদ্বয় তত বেশি সক্রিয় থাকবে এবং রক্তকে পরিশোধন করে শরীরের সকল দুষিত পদার্থ বের করে আনবে। রোগজীবাণু শরীরের ভেতরে বেশিক্ষণ অবস্থানের সুযোগ না পেলে রোগ বাসা বাঁধারও সুযোগ পাবে না!
  •  প্রতিবার অবশ্যই পরিষ্কার ফুটানো পানি পান করতে হবে। খুব ভালো হয় সব সময় হালকা কুসুম গরম পানি (শরীরের তাপমাত্রার সঙ্গে মানানসই) পান করতে পারলে
  •  গোসলের আগে শরীরের রক্তচাপ কমানোর জন্য এক গ্লাস পানি পান করবেন
  •  কখনোই দাঁড়িয়ে পানি পান করবেন না। দুই হাতে পানির পাত্র ধরে কমপক্ষে তিন শ্বাস তথা ঢোক-এ ধীরে ধীরে। প্রত্যেক ঢোক-এর আগে পর্যাপ্ত বিরতি নিন
  • হজম ভালো হওয়ার জন্য খাবার খাওয়ার ৪০ মিনিট আগে প্রথমে বিশুদ্ধ পানি পান করুন; তারপর শক্ত খাবার খান।
  •  পর্যাপ্ত পানি পান করলে মলাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি ৪৫%, স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ৭৯%, ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি ৫০% কমে যায়
  •  প্রত্যেকদিন আট থেকে দশ গ্লাস পানি পান করলে ৮০% ভুক্তভোগীর পিঠ ও গিঁটের ব্যাথা সেরে যায়।
  • দিনের বেলায় পানি বেশি পান করুন রাতের বেলায় কম পান করুন। কারনঃ রাতের বেলায় আমরা ঘুমায় । প্রসাবের বেগ আসলেও আমরা প্রসাব করি না। আর এটাই কিডনি নষ্ট হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।

পানি পানের ক্ষতিকর অভ্যাস


  • খাওয়ার মাঝখানে পানি পান করবেন না’ অথবা ‘খেয়ে উঠেই পানি পান করবেন না’
  • অনেকই আছে যারা পানি পানের সময় একেবারে অনেক মাত্রায় পানি পান করে থাকেন এবং এমনটা করতে গিয়ে পানি প্রায় গিলে গিলে খান। এইভাবে পানি পান করলে শরীরের ভিতর হঠাৎ করে চাপ খুব বেড়ে যায়, ফলে নানাবিধ অঙ্গের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • শরীরের কথা ভেবে এই বিষয়টা সর্বক্ষণ মনে রাখতে হবে যে ভুলেও দাঁড়িয়ে পানি পান করা চলবে না। কারণ এমনটা করলে দেহের ভিতর জলের ভারসাম্য ঠিক থাকে না। ফলে জয়েন্টে পানি জমে গিয়ে আর্থ্রাইটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন, বসে জল খেতে হবে। এই বদ-অভ্যাসটি শরীরের অক্সিজেন সরবরাহকে বাধাগ্রস্থ করে। এর ফলে ফুসফুসেরও ক্ষতি হতে পারে।
  • খাবার খাওয়ার সাথে সাথে পানি পান করলে হজমে সহায়ক পাচক রসের কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করে। ফলে হজম ঠিক মতো না হাওয়ার কারণে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
  • আপনি যদি বরফ-ঠাণ্ডা পানি পান করেন তাতে মুখে তো বটেই পাকস্থলীতেও ধাক্কা দেয়। খাবারের সঙ্গে ঠাণ্ডা পানি খাওয়া হজম প্রক্রিয়ায় বিষাক্ত অনুভূতির সৃষ্টি করে।
  • দাঁড়িয়ে পানি পান করলে নার্ভ-এ প্রদাহ বেড়ে যায়। ফলে কোনো কারণ ছাড়াই দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ বেড়ে বদহজমের সমস্যাও হতে পারে!
  • শরীরের ওজনের সঙ্গে পানি পানির পরিমাণের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। সে কারণে শরীরে মাত্র ২% পানি স্বল্পতা দেখা দিলে সাময়িকভাবে স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে।
    পানি স্বল্পতার কারণে শরীরের শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা বহুলাংশে কমে যায়! বেশি পানি পান করলে শরীর থেকে অতি সহজে বর্জ্য পরিষ্কার হয়ে যায় এবং দেহের প্রত্যেকটি কোষে পর্যাপ্ত পুষ্টি ঢুকতে পারে।
  • অনেকেই মনে করেন- চা, কফি ও কোমল পানীয় শরীরে পানির যোগান দেয়! কিন্তু না, সেটি অন্যভাবে ক্রিয়াশীল এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত চা কফি পান মানবদেহের জন্য উল্টো ক্ষতির কারণ। কোমল পানীয় নামে কোমল হলেও কিডনির মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে।
  • স্ট্রোক বা হার্ট এটাক এড়াতে ঘুমের কিছুক্ষণ আগে সামান্য পানি পান করবেন।

No comments:

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.

'; (function() { var dsq = document.createElement('script'); dsq.type = 'text/javascript'; dsq.async = true; dsq.src = '//' + disqus_shortname + '.disqus.com/embed.js'; (document.getElementsByTagName('head')[0] || document.getElementsByTagName('body')[0]).appendChild(dsq); })();